ছাত্র আন্দোলন (২০১৮) এর ৯ দফা দাবির মধ্যে মন্ত্রী শাহজাহান খানের পদত্যাগ নেই। যদিও ঘুরে ফিরে ছাত্ররা সেটাই চাইছিল। সাধারণ জনগণ, সরকার, অভিভাবক, মিডিয়া সহ সারা দেশ, বিদেশ যখন বুঝে গেছে এর বিকল্প নেই। তখন প্রিয় মন্ত্রীকে বুকের মধ্যে ধরে রাখতে সরকারের একটিই কর্ম বাকি রয়েছে, যেটা হচ্ছে নীলকন্ঠী হয়ে যাওয়া। অর্থাৎ বিষ খেয়ে বিষ হজম করা। গত কয়েক যুগেও কোন সরকার এত তোপের মুখে পড়েনি, অন্তত কোন ধার করা দলীয় লোকের জন্য তো নয়ই। যেটা এবার আওয়ামী সরকারকে সুদে-আসলে গুনতে হলো। আন্তর্জাতিক ভাবে বিশ্বে যে তোলপাড় করেছে এই ক্ষুদে বিচ্ছু স্কুল ছাত্রছাত্রীরা ; তার ভবিষ্যৎ তোপ জেনে শুনেও কেন কঠিন হতে হয়েছিল সরকারকে? চলুন খুঁজে দেখি।
গণ বাহিনীর প্রধান এবং এক সময়ের জাসদের নেতৃত্বেদানকারী, যিনি মুজিব হটাও আন্দোলনে সরাসরি ও স্বক্রিয়ভাবে কাজ করে গেছেন, তিনিই কিনা বর্তমান আওয়ামী সরকার দলের মন্ত্রী! জাতির পিতা মুজিবের চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বাজাতে চেয়েছিলেন তারাও কি নেই এই সরকারের দলে? আছে। সেটা বিএনপির ভেতরেও আছে। তাহলে কি জেনে বুঝে অস্তিত্ব রক্ষার মহরত চলছে রাজনীতিতে? কেন এমন বিভৎস রূপ বড় বড় দলগুলির ভেতরে? তবে কি সরকার টিকিয়ে রাখতে এই নীল কন্ঠী আচরণ? অর্থাৎ বিষ খেয়ে বিষ হজম করা? নতুবা এমন হয় কেন? এর কি কোন উত্তর আছে?
আছে বৈকি। আসুন এ বছরের বাজেটের দিকে তাকাই। ৪০০ হাজার কোটি টাকা বাজেটের মধ্যে ২৬ শতাংশ এসেছে পরিবহন খাত হতে। আর এই পরিববহণ সেক্টর পুরো নিয়ন্ত্রণ করেন সেই গণ বাহিনীর নেতা এবং আজকের পরিবহণ নেতা মন্ত্রী শাহজাহান খান। তবে? তবে আর কি? উত্তর পেয়ে গেছেন তো।
আচ্ছা এবার আরো একটু পেছনের দিকে তাকাই। বর্তমান সরকার প্রায় এই ১০ বছর ক্ষমতায় এসেও কোন পরিবহণ ধর্মঘটের মুখোমুখি হয়েছে কি ? হয়নি। অথচ এর আগেও বিএনপি এবং তার আগে আওয়ামী সরকারের আমলে হরহামেশাই যা ঘটেছে। কোটি কোটি টাকা দেশ ক্ষতি পূরণ মেপেছে এই পরিবহণ সেক্টর হরতালের জন্য। আর সরকার পড়েছে রোষানলে। তবে কি তখন শাহজাহান খান এই সরকারের সাথে ছিলেন না বলেই হয়েছে? এমনকি দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ানো শাহজাহান খান বিএনপির সাথেও মিশতে চেয়েছিলেন তখন। কিন্তু বর্তমান এই সরকারই তখন দীর্ঘ মেয়াদী ব্যবস্থা নিলো যাতে পরিবহণ ধর্মঘট না ঘটে। কিভাবে? হ্যাঁ, শাহজাহান খানকে একটি সিংহাসনের আসনে বসিয়ে দিয়ে।
ঠিক আছে তিনি দেশের ভালো চান বুঝলাম। বর্তমান সরকারও আমাদের ভালো চান যা মনে প্রানে বিশ্বাস করি। এদিকে, যে কোন ধরনের হরতালের চেয়ে দেশের অর্থনীতিতে যেখানে পরিবহণ ধর্মঘট সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে সেখানেই তো শাহজাহান চাই। তাতেই কেল্লাফতে।
তার মানে কি দাড়ালো? যাকে দিয়ে এতবড় দায় হতে মাফ পাওয়া যাবে স্বভাবতই তার যেকোন ন্যায় বা অন্যায় আবদার মেনে নিতে বাধ্য যেকোন সরকার। আর সেটাই হয়েছে।
তবে কি শাহজান খান একটি অন্যতম নাম এবং অপরিহার্য? ঠিক তাই। যা দেখলো সারা দুনিয়া। যেখানে তার পদত্যাগ সারা দেশ আওয়ামীলীগকে ভবিষ্যতের কান্ডারী রূপে বড় একটি আসনে নিয়ে আসতো পারতো। যা পরবর্তী প্রজন্ম চির জীবন মনে রেখে আওয়ামীলীগকে তাদের যোগ্য মাপকাঠিতে মাপতো। সেটা এখন অনেকটাই মলিন দেখাচ্ছে। তাহলে এটা কি এটা বোঝা খুবই কঠিন যে সব শাহজাহান মমতাজের জন্য তাজমহল গড়ে না। এই শাহজাহান আওয়ামীলীগ এর জন্য সাময়িক ভালোবাসা দেখালেও আওয়ামীলীগ এর সত্যিকারে বন্ধু কি?
কিন্তু আওয়ামীলীগ সরকার কেন এই দীর্ঘ মেয়াদী সুখ নিতে চাইলো না? একটিবার চাইলেই সারা জীবন ইতিহাসের আরো একটি শ্রদ্ধার জায়গায় দলটি পৌঁছে যেতে পারতো। বিচক্ষণ মাননীয় প্রধান মন্ত্রীকে কেউ ভুল বুঝিয়েছিন নাতো? অথবা মুজিবের মত মুজিব কন্যার চারিপাশে চাটার দলের সংখ্যা দিনকে দিন বেড়ে চলেছে কি? বলছি এই কারণেই যে, এই স্কুল শিশুরাই তো তাদের মনের মাঝে আওয়ামী বীজ অঙ্কুরিত করার সুযোগ দিয়েছিল। তবে কি শাহজাহান খান বড় একটি ফ্যাক্টর হয়ে সরকার নিয়ন্ত্রণ করে দেখালো?