সাদিক তাজিন

করোনার করালগ্রাসে বিশ্ব আজ মুখ থুবড়ে পড়ার মত অবস্থা। বিশ্বের বাঘা বাঘা রাস্ট্রগুলোর অসহায়ত্ব দেখে মনে হচ্ছে প্রকৃতির কাছে মানুষ কত অসহায়। মোকাবেলার অক্ষমতা কতোটা নিদারুণ হলে মানুষ এরকম দিগ্বিদিক ছুটে বেড়াতে পারে। কতোটা ভীত হলে মানুষ কাজ ফেলে খাদ্যমজুত করে ঘরে বসে থাকতে পারে। সুপারমার্কেটগুলোতে পণ্য সংকট দেখা দিতে পারে। রাস্ট্রযন্ত্র কতোটা নিরুপায় হলে পাবলিক যান, শপিংমল, রেস্টুরেন্ট, কফিবার, ক্লাব ইত্যাদি প্রতিষ্টান বন্ধ করে দিতে পারে। প্যারিসে অবস্থানের সুবাদে এই পরিস্থিতি স্বচক্ষে অবলোকন করতে হচ্ছে।
দূঃখের কথা, এই সময়েও বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরা অসংগ্লগ্ন কথা বন্ধ করছেন না। কেউ বলছেন করোনা স্বর্দি, জ্বরের মত, কেউ বলছেন তারাই কেবল মোকাবেলায় সক্ষম, তাদের যোগ্য নেতৃত্বের কাছে করোনা কিছুই না।
আক্রান্ত প্রথম দেশ চীন তাদের ক্ষয় ক্ষতি সামলানোর জন্য ব্যতিব্যস্ত থাকতে থাকতেই একযোগে ইরান, ইউরোপ, আমেরিকায় করোনা হানা দিয়েছে। আক্রান্ত দেশগুলোর প্রায় সবটিতেই বিপুলসংখক অভিবাসী বাংলাদেশীরা রয়েছে। অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন। অনেকেই আক্রান্ত হওয়ার আগে স্বদেশে ফিরে বাঁচতে চাইছেন। কেউ কেউ অক্রান্ত হয়েই মৃত্যুর আশংকায় অন্তীম সময় স্বজনদের পাশে থাকার মানসে দেশে ফিরছেন। নিয়তির কাছে নিজেকে শপে দিচ্ছেন বাকিরা।
কি পরিমান আতংকের মধ্য দিয়ে গেলে মানুষ এরকম স্বীদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে পারে! কি পরিমান অসহায়ত্ব ঘ্রাস করলে প্রবাসীরা আক্রান্ত দেশগুলো থেকে দেশে ফিরতে চাইতে পারে। তারাও জানে, খুব ভালো করে জানে যে, বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরা যত যাই বলুক একবার এই ভাইরাস বাংলাদেশে ছড়ালে কি ভয়াভহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে! কি ধ্বংসযজ্ঞের মুখোমুখি হতে পারে জাতী! জেনেশোনে তারা এমনটি করার কথা ছিল না। কারণ যে স্বজনদের জীবনমান উন্নত করতে তারা প্রবাসে রক্ত জল করা পরিশ্রম বছরের পর বছর ধরে করছে সেই স্বজনদের নিশ্চয়ই আক্রান্ত করার ইচ্ছা পোষন করবেনা। আমি মনে করি ভয় থেকে, আতংক থেকে এবং স্বীদ্ধান্তহীনতা থেকে তারা গণহারে দেশে ফেরার চিন্তাটি করছে। তাদের উদ্দেশ্যে কোন জটিলতা নেই, পংখিলতা। কথিত আছে ডুবন্ত মানুষ খড়কুটো আকড়ে ধরে বাঁচতে চায়।
এজন্য বাংলাদেশের তরফে প্রবাসীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা দরকার। দরকার তাদের এটুকু বুঝানো, যে আক্রান্ত হলে স্বদেশে ফিরলেও বাঁচার সম্ভাবনা ক্ষীণ৷ বরং মা, মাটিও ঝুকিতে পড়বে। আন্তর্জাতিক যোগাযোগের ক্ষেত্রেও সরকারের সংকোচন নীতি অবলম্বন করা উচিত। প্রবাসীদের দায়সারাভাবে দেশে না ফেরার কথা বললে তো আর হয়না। আবার রূঢ় আচরণও সুন্দর নয়।
দেশে ফেরা প্রবাসীদের বিমানবন্দরে নিপীড়ন, হয়রানি নতুন কিছু নয়। এখন নাকি যুক্ত হয়েছে করোনা নেগেটিভ সনদ দেওয়ার নামে নতুন হয়রানী। এগুলো এই সময়ে এসেও? আমরা বাঙ্গালী বলেই হয়তো এমনটি করতে পারছি।
নিউজে দেখলাম ইতালীতে সেদেশের মানুষগুলো ভিনদেশী এমনকি দেশী সব মানুষকে শান্তনা দিচ্ছে। এই দূঃস্বময়ে একে অন্যকে শান্তনা দিচ্ছে। প্যারিসে দেখলাম চায়নিজরা নিজে থেকে হীনমন্যতায় ভুগলেও ফরাসীরা তাদের প্রতি নূন্যতম বিরূপ আচরণ করছেনা। ভাবছি আমরা হলে কি তাই করতাম? যেখানে আমরা গুজবের উপর ভর করে স্বজাতীর কাওকে গণপিটুনি দিয়ে প্রাণে মেরে ফেলতেও কুণ্ঠাবোধ করিনা। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সহিংসতার কথা সকলেরই জ্ঞাত।
গতকাল থেকে ফ্রান্সে সব ধরনের পাবলিক সমাগম বন্ধ। মসজিদ, গির্জায়ও সমাবেত প্রার্থনা বন্ধ। গতদিন এদেশের প্রেসিডেন্ট ইমোয়েল ম্যাক্রোর স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি বন্ধের ঘোষনার সাথে সাথে উদ্দীপনা জাগানিয়া যে কথাটি আমার মনে ধরেছে তা হলো, “আজ আমরা একে অপরের নিকট থেকে দূরুত্ব বজায় রাখছি কাল স্থায়ীভাবে দীর্ঘ সম্পৃক্ততার জন্য। আজ আমরা পরষ্পর হাত মেলাচ্ছি না কালকের দীর্ঘ আলিঙ্গনের জন্য।”
কথাগুলো আদতেই এই দূঃসময়ে আশা জাগানিয়া। মানুষের সব কিছু শেষ হয়ে গেলেও যে জিনিসটি মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার প্রেরনা দেয় তা হলো স্বপ্ন। আর এই স্বপ্ন জাতীর কর্ণধাররাই জাতীকে দেখাবেন।
বাংলাদেশের দিকশুণ্য মানুষের স্বপ্নগুলো সবদিনই ম্লানপ্রায় ছিল। আজকের এই পরিস্থিতিতে রাজনীতিবিদদের অসংগ্লগ্ন কথাবার্তা মানুষকে আরো অসহায়ত্বের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অন্য সময়ে যাই করুক, এখন বাংলাদেশকে রক্ষার কাজটুকু করুক দেশের কর্ণধাররা। দেশের মানুষকে আশার বাণী শোনাক। জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে করণীয়টুকু করুক। শোনলাম এখনো জনবহুল বাংলাদেশের স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি, বানিজ্যমলো, কৃষিমেলা চলছে। খোদানাখাস্তা করোনা সেখানে সশক্তিতে পৌছে গেলে কি হবে দেশের!
স্রষ্টা পৃথিবীকে রক্ষা করুন। মানুষকে রক্ষা করুন। বাংলাদেশকে রক্ষা করুন।
প্যারিস, ফ্রান্স।