বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের উত্থান কি চুড়ান্ত ?

পর্ব-২

এবার ঢাকার আশকোনায় গত শনিবারের জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নারীদের চরমপন্থায় সম্পৃক্ত হওয়ার উদাহরণ এবং আত্মঘাতী বেল্টের ব্যবহার প্রধান দুটি উদ্বেগজনক বিষয় হিসেবে দেখছেন বাংলাদেশের নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার শাখাওয়াত হোসেন বিবিসির সাথে এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেছেন ঢাকার আশেপাশেই তাদেরকে (জঙ্গিদের) এখন সংগঠিত হতে দেখা যাচ্ছে”।

ঢাকাকে কেন্দ্র করে জঙ্গিদের সংগঠিত হবার চেষ্টা করার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে  শাখাওয়াত হোসেন বলেন, “যখনি এধরণের কর্মকাণ্ড হয়, তখনি ফোকাস থাকে যে যেই জায়গাটায় এধরণের কর্মকাণ্ড চালালে সেটা আন্তর্জাতিক খবরে পরিণত হবে এবং আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিক্রিয়া তৈরি করবে। জঙ্গি সংগঠণগুলোর টার্গেট সবমসময়ই থাকে যে জায়গা থেকে তারা সবচেয়ে বেশি প্রোপাগান্ডা ভ্যালুটা তারা পাবে”।

ঢাকাকে ‘আনম্যানেজেবল্ সিটি’ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানে নিয়ন্ত্রণ করাটা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্যও বেশ কঠিন।

শনিবার ঢাকার আশকোনায় একটি বাড়িতে পুলিশের অভিযানে একজন নারী আত্মঘাতী জঙ্গি নিহত হয় এবং পুলিশের সাথে গোলাগুলির পর অপর এক কিশোরও নিহত হয়।

মি. হোসেন বলেন, জঙ্গি সংগঠণগুলোর ওপর চাপ পড়ার কারণে তারা এখন একটি ভিন্ন কৌশল অবলম্বনের চেষ্টা করছে। নতুন করে সংগঠিত হওয়া, অস্ত্র সংগ্রহ এবং প্রশিক্ষণের বিষয়টিই তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে বলে তিনি মনে করছেন।

“নতুনভাবে আবার কিছু তরুণ যাদেরকে বলা হচ্ছে হারিয়ে গেছে, তাদের হদিশ কিন্তু পুলিশ এখনো পর্যন্ত পায়নি। এইসমস্ত বিষয় কিন্তু একটি ইন্ডিকেশন যে, এই সময়টাতে আবার তারা নতুনভাবে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে তাতে কোন সন্দেহ নাই”।

সম্প্রতি ঢাকার বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং চাকুরিজীবীসহ অন্তত ৬ জন তরুণ নিখোঁজ হয়। পুলিশের সন্দেহ, তারা উগ্রপন্থার দিকে ঝুঁকে পড়ে বাড়ি ছাড়তে পারে।

বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম বলেন, “আজকে পত্রিকায় একটা ছবি আছে, যে ছবি দেখে আমার সমস্ত অন্তর আত্মা কেঁপে উঠেছে। একটা চার বছরের শিশু গ্রেনেডে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে হাসপাতালে পড়ে আছে।  কেন? জঙ্গি আক্রমণ হয়েছে।

“মা জঙ্গি হচ্ছেন, বাবা জঙ্গি, জানি না সত্য কী?কী অবস্থা জানি না? কিন্তু চার বছরের শিশু এক নির্বাক শক্তিদৃষ্টি দিয়ে সে হাসপাতালে পড়ে আছে। এই অবস্থা চলছে দেশে এখন।

দেশকে সুষ্ঠু ধারায় পরিচালিত করতে সামাজিক ও পারিবারিক সচেতনতামূলক বিষয় সমূহকে গুরত্ব দিতে হবে বলে মানবাধিকার বিশ্লেষকরা মনে করেন।তাই অভিভাবকরা নীচের প্রশ্নগুলোর সদুত্তর সন্তানদের ও আপনজনের নিকট থেকে নেওয়ার চেষ্টা অব্যহত রাখতে হবে –

*আপনার সন্তান, আপনজন কোথায় যায় ?

*কাদের সাথে চলাফেরা করে ?

*লেখাপড়া বা বিশেষ কোন কোর্স করার নামে বাইরে থাকে কিনা ?

*নিয়মিত স্কুল/কলেজে / নিজ কাজে যায় কিনা ?

*রাত জেগে ফোনে কথা বলে কিনা ?

*টাকা পয়সার জন্য মা-বাবা আপনজনকে চাপ দেয় কিনা ?

*কাজে আগ্রহ আছে কিনা বা কাজ এড়িয়ে যায় কিনা?

পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতায় অনিহা দেখায় কিনা

*পরিবারের সদস্যদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে কিনা ?

*পোষাক/ফ্যাশনে পরিবর্তন

এ সব নেগেটিভ পরিবর্তন কারো মাঝে দেখলেই বুঝতে হবে আপনার সন্তান কোন দেশদ্রোহী বা অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়েছে।

এখন পর্যন্ত ঢাকার আশকোনার আত্মঘাতী ওই ‘জঙ্গি’ নারী সহ ৮টি জঙ্গি ঘটনায় যে ক’জন সন্ত্রাসী বা জঙ্গি নিহত হয়েছে তাদের অন্যতমরা অভিজাত পরিবারের সন্তান ও দুই একজন মূল ধারার রাজনীতিবিদেরও সন্তান বলে বিভিন্ন মাধ্যমে জানা যায়।

আদর্শ পরিবারের সন্তানদের এ রকম অনাদর্শে উদ্বুদ্ধ হওয়া শুধু ব্যক্তি নয়; এর ছোবল বিষাক্ত করছে সমাজ ও রাষ্ট্রকে। দেশকে হেয় করেছে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে।

তার স্ট্যাটেটাসে তিনি জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে করণীয়/পরামর্শ দেন।

১) সকলের সমন্বিত ও সামাজিক সচেতনতা ( Social Awareness) সামাজিক মূল্যবোধ তৈরী করবে ও অভিভাবকদের দায়িত্বশীলতা বাড়াবে। অভিভাবকদের এ বিষয়ে অনন্য ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে।

২) যুবসমাজকে খেলাধুলা ও সৃষ্টিশীল কাজের সুযোগ করে দিতে হবে, সচেতনতা বাড়াতে হবে।

৩) ব্যাধি ঠেকাতে প্রথম প্রতিরোধ পরিবার থেকেই আসতে হবে।

৪) সন্তানের বন্ধু বা পারিপার্শ্বিকতা মা হিসেবে আমলে নিতে হবে। কারণ মা সন্তানের পরিবর্তন আগেই বুঝতে পারে।

৫) একজন মা হিসেবে আপনিই হচ্ছেন তার জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়। উপরে উল্লেখিত যে কোনো নেগেটিভ পরিবর্তন সন্তানের মাঝে দেখলেই সন্তানকে বুকে টেনে নিয়ে বুঝাতে হবে।

৬) পারিবারিক বন্ধন ও শিক্ষা, ধর্মীয় অনুশাসন, সৎ উপার্জন ইত্যাদি পারে এ ব্যাধি থেকে বাঁচাতে ।

৭) সরকারি উদ্যোগে (উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক) Awareness Program শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক বাড়াতে হবে।

২০১৬’ সালের শেষে যে নতূন সূর্য আলোকিত করবে ধরনী তা যেন হয় জঙ্গীবাদ মুক্ত শান্তির বাংলাদেশ।

ছরোয়ার হোসেন –

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.