নবকণ্ঠ ডেস্কঃ গত রবিবার চিরবিদায় নিয়েছেন ফরাসী ব্যবসায়ী ও সাবেক মন্ত্রী বার্নার্ড টেপি। ডমিনিক টেপি পরিবার অত্যন্ত দুঃখের সাথে তার মৃত্যু সংবাদ নিশ্চিত করেছে।
মাখসাই এর লা প্রোভিন্স পত্রিকার এক খবরে জানানো হয় টেপির মৃত্যুর সংবাদ। পত্রিকাটির বেশিরভাগ শেয়ারেরও মালিক ছিলেন বার্নার্ড টেপি।
মৃত্যুর আগে চার বছর ধরে তিনি পেটের ক্যান্সারে ভুগছিলেন। টেপি ছিলেন অ্যাডিডাসের স্পোর্টসওয়্যার কোম্পানির অংশীদার! তিনি ছিলেন অলিম্পিক দে মার্সেইলে ফুটবল ক্লাবের সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং ১৯৯৩ সালে তিনি ক্লাবটিকে চ্যাম্পিয়নস লীগের খেতাব এনে দেন।
এক বিবৃতিতে ক্লাবটি টেপির মৃত্যুতে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছে। মাখসাইদের হৃদয়ে এক গভীর শূন্যতাবোধ রেখে গেছেন, তিনি আজীবনই ক্লাবের কিংবদন্তি হিসেবে রয়ে যাবেন- বলে শোক জানানো হয় বিবৃতিতে।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ এবং ফার্স্ট লেডি ব্রিজিট এক বিবৃতিতে টেপি-কে ‘সোনালী কিংবদন্তি’ বলে আখ্যায়িত করেন। তারা আরো বলেন, লড়াকু মনোভাবের এই মানুষটি ক্যান্সারের সাথেও শেষ পর্যন্ত লড়ে গেছেন!
১৯৪৩ সালে জন্মগ্রহন করা টেপি ছিলেন একজন প্লাম্বারের ছেলে এবং এই দরিদ্র শৈশব থেকে বের হয়ে তিনি নিজেকে ফ্রান্সের অন্যতম একজন বিত্তশালী ব্যাক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে তিনি রাজনীতিতেও প্রবেশ করেন এবং ১৯৯০ সালে তিনি ফ্রাংকোয়া মিটাররান্ডের সমাজতান্ত্রিক সরকারের নগর বিষয়ক মন্ত্রী এবং পরে ফরাসি ও ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মন্ত্রী হন।
টেপি শুরু করেছিলেন দিনের বেলা বেলভিলের শ্রমিক কোয়ার্টারে টেলিভিশন বিক্রির মাধ্যমে এবং রাতের বেলা তিনি ক্রুনার ও রেসকার ড্রাইভার হিসেবে কাজ করতেন।
কিন্তু শীঘ্রই তিনি এসব কাজ ছেড়ে ৩০ বছর বয়সের মধ্যেই ছোট এক সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন কিছু ব্যর্থ কোম্পানি কিনে তা পুনরায় বিক্রি করার মাধ্যমে।
কিন্তু ১৯৯০ সালের দিকে তার এই সাম্রাজ্য নাটকীয় ভাবে ভেংগে পড়ে যার শুরু হয়েছিলো ফুটবল ম্যাচ-ফিক্সিংয়ের দায়ে কারাভোগের মাধ্যমে!
১৯৯০ সালে জার্মান স্পোর্টস ব্র্যান্ড অ্যাডিডাস ক্রয়ের জন্যও তাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছিলো যা তাকে পরবর্তীতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ক্রেডিট লায়োনেইসের কাছে বিক্রি করে দিতে হয়েছিলো! পরবর্তীতে ২০০৮ সালে একটি সালিশি প্যানেল খুঁজে পায় যে টেপি প্রতারণার শিকার হয়েছিলেন কারণ বিক্রির সময় ক্রেডিট লায়োনেইস অ্যাডিডাসকে অবমূল্যায়ন করেছিলো এবং এজন্য তাকে ৪০৪ মিলিয়ন ইউরো ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছিলো!
নানান ঘটনার পর ২০১৭ সালে আদালত তাকে অ্যাডিডাস বিক্রয়ের এই অর্থ ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেয় কিন্তু পরবর্তীতে তিনি একটি আপিল জিতেন। ২০১৯ সালে তিনি এই জালিয়াতি মামলা থেকে খালাস পান।
অবশেষে প্রসিকিউটররা আপিল করেন এবং টেপির বিরুদ্ধে নতুন মামলা খোলা হয়। একটি আদালত তাকে ব্যাংকের সাথে সালিসি নিষ্পত্তির দায়ে জালিয়াতির জন্য দোষী সাব্যস্ত করেন।
সুদীর্ঘ, বর্ণিল ক্যারিয়ারে বিভিন্ন বিপরীতমুখী ঘটনায় পরিপূর্ণ এই মানুষটি ২০১৫ সালে একবার স্বীকার করে বলেন যে ‘আমি কিছুই পাইনি।’
নিউজের ©সর্বস্বত্ব নবকণ্ঠ কর্তৃক সংরক্ষিত। সম্পূর্ণ বা আংশিক কপি করা বেআইনী , নিষিদ্ধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।